Parle-G


কয়েকদিন আগে মনুদার ভাই খোকন রিকশাওয়ালার রিকশাতে বাড়ি ফিরছি রাতের দিকে। স্যাঁত স্যাঁতে কুয়াশার মধ্যে একটি দোকান খোলা ছিল ঘর ফেরত নিরুপায় মানুষের জন্য। আমার সিগারেট ফুরিয়ে গেছিল, তাই দোকানটিতে দাড়াতে বললাম খোকনকে। আমি এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে টাকা ফেরত নিয়েছি আর খোকন দু প্যাকেট Parle-G বিস্কুট কিনল ছয় টাকা দিয়ে। আমার কি মনে হল জানিনা, আমিও দুই প্যাকেট Parle-G কিনে নিলাম...
খোকনঃ “দাদা, এই বিস্কুটটা ভালো”
আমিঃ “হু?”
খোকনঃ “আমি রোজ রাতে দুই প্যাকেট বাড়ি নিয়ে যাই”
আমিঃ “বাঃ, এক প্যাকেট বিস্কুট.. মানে অনেক এনার্জি, শক্তি। বুঝলা খোকন?
খোকনঃ “ঠিক বলেছো দাদা, সকালে উইঠে যখন চা দিয়ে খাই সাথে ছেলে মেয়ে গুলাকে নিয়া, তখন ভালো লাগে”
আমি আবার কুয়াশায় মন দিয়ে ফেললাম... হাত দুটো জ্যাকেটের পকেটে, আর মুখটা যেন, যাকে বলে স্মিত হাস্য হয়েই রয়ে গেল...।
আমার বাড়ির সামনে, অন্ধকারে, একটা সাদা লাট্টুর মত দাঁড়িয়ে আছে আমার ‘উচ্চাকাঙ্খার প্রতিক’। আমার সদ্য লাগানো স্ট্রীট লাইটের আলোয় বন্দি কুয়াশা...। রিকশা থেকে নামি। পকেট থেকে খুচরা পাঁচ টাকার কয়েনের সাথে দুটা একটাকার কয়েন খোকনকে দেই,
আমিঃ “খুসি?
আসিরে ভাই”...
...বলে জ্যাকেটের পকেটে হাথ ঢোকাই, আর Parle-G এর প্যাকেটটা খচ্খচ্ শব্দ করে ওঠে।
খোকনঃ “দাদা। আচ্ছা, ‘জী’ মানে তো জীনিয়াস, তাইনা?”
আমিঃ “না খোকন, ‘জী’ মানে জীনিয়াস না ভাই। আসলে পারলেই ‘জী’ মানে জীনিয়াস হতেই পারে। আর না পারলে ‘জী’ মানে অন্য কিছু হয়ে যায়।
খোকন কি বোঝে জানি না। আমিও বুঝতে পারিনা কি বললাম। কোথায় যেন খেই হারিয়ে যায়...
খোকন রিকশা নিয়ে চলে যায়। আমি উঠোন পেরিয়ে ঘরের দরজায় শব্দ করি। ভেতর থেকে বৃদ্ধ বাবা ধরফর করে দরজা খুলতে ওঠে, আমি শব্দ পাই।
‘পারলে’ তাকেই ‘জী’ মানে জীনিয়াস আমার জ্যাকেটের পকেটে চুপচাপ শুয়ে আছে...। আর না পারলে আমার মত পারার চেষ্টা করে যেতে হয়...।